স্বদেশ ডেস্ক:
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও শিল্পায়নের ফলে গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও সরবরাহের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে সারাদেশে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিএনজি স্টেশনসহ সব খাতে জ্বালানির জোগান অব্যাহত রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের উত্তোলন কমেছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি দেশের চাহিদা জোগানের একমাত্র নির্ভরতা হয়ে উঠেছে। ফলে দেশের জ্বালানির চাহিদা মেটানো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৭শ থেকে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সব সময় প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে বৈশি^ক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ক্রমাগত ওঠানামা করছে। গত বছরের আগস্ট থেকে জ্বালানি তেল, এলএনজি, এলপিজিসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে সংকট বাড়ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সময়মতো জ্বালানির জোগান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ জ্বালানিপণ্যের নিশ্চয়তার ওপর নির্ভর করে দেশের শিল্প-কারখানার উৎপাদন, অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ। তাদের পরামর্শ, যে কোনো মূল্যে দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের উত্তোলন দ্রুত বাড়ানোসহ এলএনজির আমদানি বাড়াতে হবে।
দেশের জ্বালানির জোগান নিশ্চিত করার বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে জ্বালানির জোগান স্বাভাবিক রাখতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ^ব্যাপী জ্বালানি নিয়ে এক ধরনের সংকট চলছে। ইউরোপ-আমেরিকা এলএনজি কেনা শুরু করেছে। ফলে জ্বালানিপণ্যের, বিশেষ করে এলএনজির দাম অনেক বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘যখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা সংকট চলে, তখন সব দেশে কম-বেশি প্রভাব পড়ে। কিন্তু আমরা সেই সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সরকার কাজ করছে। তবে যখন একটা সংকট হয় তখন সবাইকে ধৈর্যসহকারে সেটা মোকাবিলা করতে হয়।’
উল্লেখ্য, প্রথম রোজা থেকে দেশের গ্যাস সংকটে হাহাকার শুরু হয়। বিশেষ করে সিলেটের বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের একটি গ্যাসকূপে বালু আসায় মার্কিন কোম্পানি শেভরন ছয়টি কূপ থেকে গ্যাস তোলা বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রথম রোজা থেকে দেশে প্রচণ্ড গ্যাস সংকট দেখা দেয়। আবাসিক, শিল্প, বিদ্যুৎ সব শ্রেণির গ্রাহক গ্যাস সংকটে ছিল। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প-কারখানা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তবে সেই সংকট থেকে সরকার আপাতত উত্তরণ ঘটিয়েছে। গ্যাস সরবরাহ আপাতত স্বাভাবিক করেছে। বিশেষ করে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ায় এবং শেভরনের বিবিয়ানা গ্যাস কূপগুলো পুনরায় উৎপাদনে আসায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. নাজমুল আহসান এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত শুক্রবার রাত ১১টায় থেকে দ্বিতীয় এফএসআরইউ থেকে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় প্রথম এফএসআরইউ থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। অর্থাৎ এখন দুটি এফএসআরইউ থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৮৫০ এমএমসিএফডি (সর্বোচ্চ পরিমাণ) হারে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে গ্যাসের সঙ্গে বালি আসার কারণে আকস্মিকভাবে বন্ধ হওয়া বিবিয়ানা ফিল্ডের ৬টি কূপের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় ন্যূনতম সময়ে ৫টি কূপ উৎপাদনে আসে, যেখান থেকে কয়েকদিন ধরে ১১৬৬ এমএমসিএফডি হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। ফলে বিবিয়ানাসহ আইওসিগুলোর ফিল্ড থেকে এবং দেশীয় ৩টি গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি থেকে বর্তমানে প্রাপ্ত গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২৩০০ এমএমসিএফডি। এ ছাড়া বিবিয়ানা ফিল্ডের ষষ্ঠ কূপটিও দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে। সার্বিকভাবে বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে দেশীয় ও আমদানিকৃত গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ৩১ এমএমসিএফডি। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য যারা কাজ করেছেন তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে গ্যাস সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সহসভাপতি ও ইশরাক টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক গতকাল শনিবার রাতে আমাদের সময়কে বলেন, গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দিনের বেলা অল্প পরিমাণে গ্যাস এলেও রাতে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এলএনজি কিনতে এবং আমদানি করতে দেরি হয়েছে। ফলে বর্তমানে শিল্প-কারখানা বন্ধের পথে। পর্যাপ্ত পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করতে পারলেই একমাত্র সমাধান। তিনি বলেন, ঈদের আগে টানা কারখানা বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়বে শ্রমিকের বেতন-বোনাসে। অনেক কারখানা মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারবে না।
এদিকে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ গ্যাসের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। গ্যাস সংকটে অনেক কারখানা বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়বে রপ্তানির ওপর।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় হঠাৎ করে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড গড়ার দাবি করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ওইদিন রাত ৯টায় দেশে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত বছর ২৭ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, দেশে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও নানা কারিগরি জটিলতা, সঞ্চালন বিতরণ লাইনের ত্রুটি এবং বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে না ওঠায় ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ কখনই উৎপাদন করা যায়নি। গড়ে দেশে ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে দেশে গ্যাস সংকট চলছে। দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উত্তোলন কমে যাওয়ায় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ২০১৮ সাল হতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের জোগান দিয়ে আসছে।
পেট্রোবাংলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাতে প্রায় ৪৬ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। আর দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৮ দশমিক ৩০ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৭০ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২১ সাল শেষে গ্যাসের মজুদ রয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৬০ টিসিএফ। গেল বছর প্রায় শূন্য দশমিক ৮৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হওয়ায় দিন দিন গ্যাসের মজুদ কমছে।
জানা গেছে, গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ অনুযায়ী, ২০২০-২১ থেকে ২০৪০-৪১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রাক্কলিত গ্যাস রিজার্ভ, চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহ সম্পর্কিত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে যে হারে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে দেশের রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে ২০৩০ সালে ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে।
মাস্টার প্ল্যান-২০১৭ অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল দৈনিক গড়ে ৩ হাজার ১২ মিলিয়ন ঘনফুট। গড়ে দৈনিক এক হাজার ২৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি ছিল। এই ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। দৈনিক সরবরাহ করা দেশীয় গ্যাসের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি ৫৯২ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। এলএনজি বাদ দিলে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৮৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ হাজার ৯০৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৫ হাজার ৫৮৭ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি। এর বিপরীতে নতুন কোনো গ্যাস যোগ না হলে সরবরাহ আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসবে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাহিদা ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে। সরবরাহ নেমে আসবে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আপাতত গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো কারণে একদিন এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকলে দেশে গ্যাস সংকট দেখা দেয়। এটা একটা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক বিপর্যয়ের বিষয়। ফলে আমাদের এখনই টেকসই জ্বালানি সরবরাহ ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে গভীর সংকটে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালে সূফী বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্রের কোনো একটি বা দুটি কূপ থেকে গ্যাসের সঙ্গে বালু উঠে আশায় ৬টি কূপের উৎপাদন আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানি শেভরন বন্ধ করে দিলে মুহূর্তে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে গ্যাস সরবরাহে ধস নামে। এমনিতেই সংকটে থাকা গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থার সংকট মহামারীতে রূপ নেয়। বিশেষ করে রমজানের শুরুতে মারাত্মক গ্যাস সংকট সৃষ্টি করে। এই সংকট নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টর নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা দীর্ঘদিন ধরেই বাখরাবাদ এবং সাংগু গ্যাসক্ষেত্রের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের অত্যধিক উৎপাদন বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়ে আসছিলেন। তবু পেট্রোবাংলা বা জ্বালানি মন্ত্রণালয় নির্লিপ্ত থেকেছে। একই ধরনের স্ট্রাকচার থেকে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ২৬টি কূপের উৎপাদন ক্ষমতা ৫২০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে বিবিয়ানার ২৬টি কূপ থেকে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলে গ্যাস উত্তোলন যে কারিগরিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, তা বুঝতে আলবার্ট আইনস্টাইন হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। গ্যাস অয়েল থেকে যদি সত্যি ফর্মেশন বালু এসে থাকে, বুঝতে হবে কূপের গ্যাস নিঃশেষের পথে। বেশ কিছু দিন ধরেই কিছু কূপের অয়েল হেড চাপ কমে আসছিল, গ্যাসের সঙ্গে পানি উৎপাদন বাড়ছিল। তিনি বলেন, শেভরনের কূপে হঠাৎ গ্যাস সংকট এক ধরনের অগ্রিম সতর্কতা। এই সতর্কতায় জ্বালানি সেক্টর আশা করছি জেগে উঠবে।
এদিকে গ্যাসের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, গ্যাস পাইপলাইনে অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের কারণে গ্যাসের লো-প্রেশারজনিত সমস্যায় সমিতির ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া মিলগুলোর আর্থিক ক্ষতিসহ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে সুতা, কাপড় সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া মিলগুলোর মেশিনারিজেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, রমজান, পহেলা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ক্রেতার চাহিদামতো সুতা, কাপড় সরবরাহ করতে হবে, পাশাপাশি রপ্তানিমুখী নিট ও ওভেন পোশাকশিল্পে ইয়ার্ন, ফেব্রিকের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মিলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, মজুরি ও বোনাস এ মাসেই দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিল্প বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে।